Story Behind a Photo 3

ছবির পেছনের গল্প ৩


#StoryBehindAPhoto #rezakabir #story




এই ছবিটি সিকাগোতে তোলা। স্থাপত্বটি হলো এডলার প্লানেটেরিয়াম। এটি লেক মিসিগান এর পাশেই অবস্থিত। আসলে গিয়েছিলাম বিক্ষ্যাত লেকটি দেখতে। চমৎকার এক অভিগ্যতা। আমার দুই কাছের বন্ধু নিয়ে গিয়েছিলো সেখানে। অসংখ সীগাল (শঙ্খচিল) পাখি উড়ছে চারিদিকে। বাতাস এত বেশি যে পাখিগুলো আকাশের এক যায়গাতেই ভেসে থাকছে। দেখে বেশ অবাক লাগছিল। প্রচন্ড ঠান্ডা ! হাতে কোন অনুভুতি পাচ্ছিলাম না। বোঝা গেলো বেশি সময় সেখানে থাকা উচিত হবে না।


আমার সাথে ছিলো ফুজি XT2 এবং 18-55mm লেন্স। লেক থেকে দুরে অপর পাড়ে শহরের স্কাইলাইন সুন্দর ভাবে দেখা যাচ্ছিলো। অনেক ছবি তুল্লাম।

আমি বারবার প্লানেটেরিয়ামটা আর চোখে দেখছিলাম এবং ভাবছিলাম কিভাবে ছবি তোলা যেতে পারে। বন্ধুরা বারবার বলছিলো প্লানেটেরিয়ামের ছবি তুলতে। কিন্তু আমি তুলছিলাম না। আমিতো সাদামাটা একটা ছবি তুলতে আগ্রহি না।



আমি বুঝতে পারছিলাম যে আমাকে একটা প্যানরমা মতো কিছু একটা তুলতে হবে। আমি স্থাপত্বটির আনেক ডিটেইল তুলতে চাই কিন্তু সেটা করতে হলে লং সাটারে তোলা দরকার। এদিকে, ট্রাইপড আনতে ভুলে গেছি যদিও হোটেলে ব্যাগের মাঝে একটা পড়ে আছে। লং সাটারে তুলতে হলে আলো আনেক বেড়ে যাবে। ওভার এক্সপোজড হয়ে যাবে ছবি। তাই ক্যামেরাকে নিয়ে যেতে হবে অনেক ছোট এপারচারে। কিন্তু বেশি ছোট এপারচারে তুলতেও চাই না। কালার এবারেশন হবার সম্ভাবনা থাকে। দরকার হলো ND ফিলটারের । কিন্তু ভাগ্য এমনই যে এই লেন্সের জন্য আমার কাছে কোন ফিলটার নেই।


আমি দেখলাম সাটার যদি 1/60 এবং ISO200 রাখি তবুও আমাকে f22 তে যেতে হবে ছবিটা তুলতে হলে। আলো অনেক বেশি চারদিকে। XT1 ISO200 এর নিচে যেতে পারে না। আমি সাটার ১/৩০ এবং এপারচার ১১ এর নিচে যেতে চাচ্ছিলাম না। কি করা যায় ? 

ঠিক করলাম যে ক্যামেরাকে মাটিতে রেখে ছবিটা নিবো। তাহলে সাটার 1/30 কিংবা তার নিচে হলে খুব একটা সমস্যা হবে না। কিন্তু এপারচার এর সমস্যা কি ভাবে দুর করি? বোঝা গেলো সাধারন টুরিস্ট টাইপ ছবি তুলেই সন্তুষ্ট হতে হবে। দুক্ষে কোন ছবিই নিলাম না।



এদিকে ছোট্ট একটা হোচট খেয়ে পড়ে গিয়ে হাত গেলো কেটে । অনেক রক্ত পড়ছে কিন্তু এত ঠান্ডা যে কিছুই অনুভব করতে পারছি না। এ অবস্থায় কি আর করা , গাড়ীতে উঠে বললাম ফেরত যাবার জন্য।


প্লানেটেরিয়ামটির একটা ড্রামাটিক ছবি তোলার ভুত মাখায় চেপে ছিলো। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধিটি চলে এলো। বন্ধুকে জিগ্গেস করলাম যে তার সাথে সানগ্লাস আছে কি না। সানগ্লাস চমৎকার ND ফিল্টার হতে পারে।


ওর সানগ্লাসটা নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দিলাম দৌড়।


খুব ওয়াইড তোলার ইচ্ছা। কিন্ত ক্যামেরা যেখানে নিরাপদে মাটিতে রাখতে পারলাম সেখান থেকে আমি যতটুকু ফ্রেমে চাচ্ছিলাম তা আসছিলো না। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলাম যে পাশাপাশি তিনটা ছবি তুলবো এবং এদেরকে লাইটরুমে প্যানোরমা হিসাবে মার্জ করবো। এই পদ্ধতিতেই আমি সবসময় প্যানোরমা তুলি। খুব ওয়াইড এঙ্গেলের লেন্স অনেক ডিস্টর্সন দেয় যেটা আমার মোটেও পছন্দ নয়। আমার তোলা বেশীর ভাগ প্যানোরমা আসলে তিন অথবা পাচটি ছবির সমন্নয়।


ক্যামেরাকে মাটিতে রেখে সাটার নিলাম ১/১৫ এবং ISO ২০০ তে। লেন্সের সামনে সানগ্লাস হাত দিয়ে ধরে রাখলাম। এপারটার ১৮ তে যেতে হলো। প্রথমে বাম দিকের ছবিটি তুল্লাম। তারপর মাঝের ছবি এবং শেষে ডান দিকের। প্রতিটি ছবি তোলার আগে অপেক্ষা করলাম যাতে সামনে মানুষ এবং গাড়ী না থাকে। বেশ কিছু পাখি উড়ছিলো। আমি অপেক্ষা করে তুলছিলাম যাতে পাখিগুলো ফ্রেমে না থাকে। কি মনে করে যেন একটা ছবি তুলে নিয়েছিলাম পাখি সহ। প্যানারমা তৈরী করার সময় সেই ছবিটি ব্যাবহার করলাম। ভালো ড্রামাটিক একটা এফেক্ট দিলো। হাত থেকে তখনো রক্ত পড়ছিলো । টিসু দিয়ে চেপে ধরে রেখেছিলাম। কিন্তু সেদিকে খেয়াল করার সময় কোথায় :)


অতএব সবসময় কিছু অতিরিক্ত ছবি তোলা উচিত। এবং একটু বুদ্ধি খাটিয়ে সমস্যাকে এনালাইজ করে হাতের কাছের জিনিষগুলোকে ব্যাবহার করেই সমাধান খোজা উচিত।


“আপনি যদি ফটোগ্রাফি নিয়ে সিরিয়াস হন তবে আপনার ব্যাগে সবসময় একটা ক্যামেরা থাকা দরকার। যে কোন পরিস্থিতিতে ভালো ছবি তুলতে পারতে হবে। এটা বেশ প্রাকটিসের একটা ব্যাপার। আশেপাশের অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতিকে আপনার অনুকুলে আনতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রয়োজনিয় বিষয়টি হলো আলো। আপনি যদি আলোকে বুঝতে পারেন তবে বেশির ভাগ কাজই শেষ”